শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ইউএফএস’র ১৫৮ কোটি টাকা লোপাট : এমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা জানতে চান হাইকোর্ট

ইউএফএস’র ১৫৮ কোটি টাকা লোপাট : এমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা জানতে চান হাইকোর্ট

স্বদেশ ডেস্ক:

শেয়ারবাজারে চার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আলমগীরের দুবাই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসাথে ওই এমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২ জানুয়ারি) এ বিষয়ে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নেয়া হলে বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত আদেশ দেন। আদালত এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে দৈনিকটির সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে জানাতে বলেছেন।

আদালতে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

শনিবার দৈনিকটির ‘১৫৮ কোটি টাকা নিয়ে দুবাই পালিয়েছেন এমডি’ শীর্ষক প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়, শেয়ারবাজারে চার মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে ইউএফএস নামের একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।

এই টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীর। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। ২০১৮ সাল থেকে তহবিল সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে চক্রটি।

এক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) দেখিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে অন্ধকারে রাখা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে চার বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি। অডিট কোম্পানিও ভুয়া রিপোর্টকে বৈধতা দিয়েছে। বিএসইসির প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এ তথ্য।

ইতোমধ্যে কোম্পানিটির সাথে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বিএসইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। এর ফলে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাজ মানুষের টাকা নিয়ে ব্যবসা করে শেয়ার হোল্ডারদের মুনাফা দেয়া। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা নজিরবিহীন। এর ফলে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো কমবে। ফলে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ইউএফএস একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) কোম্পানি। বিএসইসির অনুমতি নিয়ে এই কোম্পানি বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে। এই প্রক্রিয়াকে শেয়ারবাজারের পরিভাষায় মিউচ্যুয়াল ফান্ড বলা হয়।

নিয়ম অনুসারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে কোনো অনিয়ম হলে ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে রিপোর্ট করতে হয়। কিন্তু ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ানের সামনেই এই জালিয়াতি করেছে ইউএফএস। ভুয়া সম্পদ দেখানো এবং অস্তিত্বহীন ব্যাংক ব্যালেন্স দেখিয়েছে তারা। এসব বিষয়ে অভিযোগ এলে ১৯ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিশন। ৪ মাস ১০ দিন পর ৩০ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে অর্থপাচার করছে। এক্ষেত্রে চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য মিলেছে।

আবার তদন্তকালে পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে আরও অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। শেয়ার বিক্রির এই তথ্য যোগ হলে আত্মসাতের অর্থের পরিমাণ আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে কমিশন ধারণা করছে, প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র।

সূত্র : ইউএনবি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877